Tuesday, August 31, 2021

সোনালী চক্রবর্তীর জহর সেনমজুমদার-এর কবিতাপাঠ

 


এই সামান্য জীবনের অর্জন কবিতার জগতে তিনি আমার দীক্ষা ও শিক্ষাগুরু, তাই হাহাকার ঘনালে আমি তাঁকেই পড়তে বসি, বারবার।
🙏🏻
কবি ~ জহর সেনমজুমদার
"বজ্রপাত শেষ হয়ে গেছে , বীর্যপাত শেষ হয়ে গেছে , অগ্নিপাত গর্ভপাত শেষ সব শেষ , তবুও বালুরাশির ভেতর জলের মতো , আঁকাবাঁকা আঁকাবাঁকা , তুমি জল শুধু জল , সান্ধ্যভাষার মতো , ভেসে চলেছো , ভেসে ভেসে , তোমার পিছু পিছু তিস্তার পোস্টমাস্টার , তোমার পিছু পিছু আত্রেয়ীর পোস্টমাস্টার , তোমার পিছু পিছু তুঙ্গভদ্রার পোস্টমাস্টার রান্না করা মাংসের ভেতর থেকে অল্প কিছু পাখি ও জোনাকি তুলে নিয়ে তোমার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে চলেছে , অন্ধকারে আজও ভেসে চলেছে"

সোনালী চক্রবর্তীর উক্তি

 

খেলা বিশেষত ক্রিকেট আর রাজনীতি বিশেষ করে ভোটের সময় এই অন্তর্জালে বিভিন্ন দেশ জুড়ে ছড়িয়ে বা জুড়ে থাকা পরিচিত মুখগুলো এত শীতল অথবা এত প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে, আমার মত যারা ধর্মহীন, রাষ্ট্রহীন এক মাটির গন্ধে বেঁচে থাকি, বড় অসহায় হয়ে পড়ি। জিভে জিভে এত নীল, কলমে কলমে এত উত্তাপ, ভয় হয়, ভয় হয়। এও নির্ভুল বুঝি কেন ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তান এই ত্রিভুজে, ক্রিকেট ও ধর্ম সবচেয়ে প্রভাবশালী দুই নেশা, রাজনীতির ব্রহ্মাস্ত্র।
নিজের অজান্তে পাপেট হচ্ছ, হায় মানুষ, এই তবে সভ্যতা?

 

সোনালী চক্রবর্তী'র মল্লিকা সেনগুপ্ত'র কবিতাপাঠ

 

    অজুহাত নেই কোনো, সব গুলিয়ে ফেলেছি, স্থান-কাল-পাত্র-যুক্তি-প্রসঙ্গ-পরিস্থিতি সবই। মল্লিকাদির এই কবিতাটা অসম্ভব ফিরে ফিরে আসছে, কেন তার সম্যক ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই, এখনো খুঁজছি।
     
    কবি ~ মল্লিকা সেনগুপ্ত
    "আপনি বলুন, মার্কস……….
    ছড়া যে বানিয়েছিল, কাঁথা বুনেছিল,
    দ্রাবিড় যে মেয়ে এসে গমবোনা শুরু করেছিল
    আর্যপুরুষের ক্ষেতে,
    যে লালন করেছিল শিশু,
    সে যদি শ্রমিক নয়, শ্রম কাকে বলে ?
    আপনি বলুন মার্কস, কে শ্রমিক,
    কে শ্রমিক নয়।
    নতুনযন্ত্রের যারা মাসমাইনের
    কারিগর,
    শুধু তারা শ্রম করে !
    শিল্পযুগ যাকে বস্তি উপহার দিল,
    সেই শ্রমিকগৃহিণী
    প্রতিদিন জল তোলে, ঘর মোছে,খাবার বানায়,
    হাড়ভাঙ্গা খাটুনির শেষে রাত হলে,
    ছেলেকে পিট্টি দিয়ে বসে বসে কাঁদে,
    সেও কি শ্রমিক নয় !
    আপনি বলুন মার্কস, শ্রম কাকে বলে !
    গৃহশ্রমে মজুরী হয়না বলে মেয়েগুলি শুধু
    ঘরে বসে বিপ্লবীর ভাত রেঁধে দেবে,
    আর কমরেড শুধু যার হাতে কাস্তে হাতুড়ি !
    আপনাকে মানায় না এই অবিচার।
    কখনো বিপ্লব হলে
    পৃথিবীর স্বর্গরাজ্য হবে
    শ্রেণীহীন রাস্ট্রহীন। আলোপৃথিবীর
    সেই দেশে,
    আপনি বলুন মার্কস,
    মেয়েরা কি বিপ্লবের সেবাদাসী
    হবে ?"

     

সোনালী চক্রবর্তীর উক্তি

 


ভালবাসলে একটা মানুষ একটা গোটা দেশ হয়ে যায়। অধিকারের, আঁকড়ে থেকে অভিযোগের অথচ দু:স্বপ্নেও ছেড়ে যেতে না চাওয়ার আকাশরঙা মাটি যার। সম্পর্ক হলো সেই রাষ্ট্র যেখানে অজস্র নীতি। লঙ্ঘন মাত্রেই হয় কাঁটাতার নয় কাঠগড়া।
কে না জানে দেশ আর রাষ্ট্র এক কথা নয়...

সোনালী চক্রবর্তীর উক্তি

 বিস্ময়ের অভাব ঘটলে আমি আয়নার সামনে দাঁড়াই। কীসের প্রত্যাশায় অন্তর্জালের কুঠুরি টাকেই অদৃশ্য করি মাঝে মাঝে? খুব সামান্য ক'জন ছাড়া কেউ তো বুঝতেই পারে না আদৌ আমি নেই। তাহলে স্রোতহীন ভাঙা কাচের অবাক এই মেহফিলে কীসের আসা, কীসেরই বা যাওয়া? তবু অন্ধকারও তো একরৈখিক নয়।


 

সোনালী চক্রবর্তীর উক্তি

 

'মিথ্যেবাদী তারাই যারা বলে ভীষণ বেড়ে গেছে জিনিষপত্রের দাম,
বলো তো, আজকের আগে এত সস্তা দেখেছো কখনো মানুষের প্রাণ?'

 

সোনালী চক্রবর্তীর উক্তি

 "শিরায় শিরায় প্লাবন আর হৃদপদ্মে ঝড় প্রবণতা, শূন্য একটি বিন্দুও গরলের অধিক কার্যকরী, চাণক্য বলেন নি কখনো...


 

সাইত্য অকাদেমি আবোজিত অনুষ্ঠানে সোনালী চক্রবর্তীর কবিতাপাঠ


 

হিন্দি পত্রিকায় সোনালী চক্রবর্তীর আলোচনা


 

সোনালী চক্রবর্তীর ভাবনাচিন্তা

 

কোনো এক জন্মে আমারও অরণ্য ছিলো, আলো ও অন্ধকার সম্যক মেখে নিতে পা নূপুরবিহীন ছিলো, পাথর বা পাখি যে কোনো ছদ্মনামে নিজেকে ডেকে নেওয়ার অজুহাত ছিলো, কবিতা কী, উন্মাদ হয়ে বেহুদা খুঁজে দেখার কালখণ্ড ছিলো....
ছিলো, পূর্বজন্ম আমারও ছিলো।

 

সোনালী চক্রবর্তীর গদ্য "অপমানের আমমোক্তারি"

 অপমানের আমমোক্তারি

 

দ্রৌপদী
শালী
খানকি
বেশ্যা

নাক কুঁচকে গেল প্রথমেই? চোখটা ব্যথা ব্যথা করে উঠল? একে তো মেয়ে (না না, মেয়েমানুষ বলবেন না, ভীষণ প্যারাডক্সিক্যাল), তায় লিখছে সাহিত্যে নারীর বঞ্চনার মত গুরুতর বিষয়ে প্রবন্ধ। তার শুরু কিনা…

তাহলে এবার যন্ত্রণাটা চোখ থেকে বুকে না নামলেও মাথায় উঠুক। আজ্ঞে ঠিক এটাই সাহিত্যে নারীর অবমাননাকর অবস্থান ও প্রায় ঠনঠনে প্রাপ্তির ভাঁড়ারের মূল চাবি। তাকে লড়তে হয় বেদান্তের ‘মায়া’ রূপী অস্তিত্বহীন সর্পটার মত ‘চরিত্র’ নামের এক আরোপিত ছায়া সৈনিকের সঙ্গে। চাইবাসা শক্তি চাটুজ্যে তৈরি করে না ঠিকই কিন্তু ওই বোহেমিয়ান শ্বাসের পরিসরটা না পেলে শক্তির কবিতাগুলোও আসে কি? এবার বলুন তো, কোনও কবি বা কথাসাহিত্যিক মেয়ে যদি ওই যাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে বা থাকে, আপনি, আপনার সমাজ ছেড়ে দিন, সাহিত্য মহলে তাকে কী কী নামে ডাকা হয়? প্রথম চারটেই না? চোখের ঈশারা করা হয় তো পড়তে গিয়ে একে অপরকে? না?

একটি নারী কাগজের উপর কালির আখরে শুধুমাত্র তার লিখনীশক্তি, অর্জিত শিক্ষা আর অধিগত প্রজ্ঞা বা মেধার প্রমাণ রাখলেই তিনি পাঠযোগ্য হয়ে ওঠেন না। তাকে সামাজিকতায় তার ব্যাক্তিগত যাপনের নৈতিক শুদ্ধতা ও তথ্যের স্বচ্ছতা জাতীয় প্রসঙ্গের জহুরি লেন্সে উত্তীর্ণ হতে হয় আগে। যদি বিবাহিত হন তাহলে তিনি যে আদতে নিতান্তই লক্ষ্মীমন্ত বৌ, লিখতে বসার আগে শুক্তোটা রেঁধে, শাশুড়িকে ওষুধ খাইয়ে, শ্বশুরের চশমা বালিশের পাশে সাজিয়ে, সন্তান-সন্ততিকে পড়াশুনা করিয়ে, বাকি সমস্ত কর্তব্য ও দায়িত্বে সুচারু নিষ্ঠার প্রমাণ রেখে আসেন, এই শংসাপত্র অতি বাধ্যতামূলক। ও হ্যাঁ, মূলত যার কারণে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটির অবতারণা, সেই স্বামী ও সম্বন্ধিত শয্যায় যে তিনি নিতান্তই সতী অংশে জন্মলাভ করেছেন, এই প্রমাণ না থাকলে কিন্তু বাকি সব যোগ্যতা একেবারে নাকচ হয়ে যাবে। আর যদি অবিবাহিত হন, তাহলে তো ল্যাঠা চুকেই গেল। কোনও প্রমাণের দরকারই নেই। যে নিজের ইচ্ছার অধীশ্বরী হয়ে থাকবে বলে সংসারের মত পবিত্র রিস্তায় জড়ায়নি আবার দুই কলম লেখে, সে তো সন্দেহাতীতভাবেই ওই যে প্রথম চারটে শব্দ। কিছুটা ধোঁয়াশা কাটছে কি যারা এখনও পড়ছেন? আপনি আমায় যুগের অগ্রগতি দেখাবেন? মননের টাইমমেশিনে বঙ্গাব্দ খ্রিস্টাব্দ বোঝাবেন? নারীপ্রগতির সেমিনার শোনাবেন? আমি আপনার বিপুল তথ্যকে যথাযোগ্য মর্যাদায় ডাস্টবিনে ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে বলব, এই মুহূর্তে দাঁড়িয়েও একজন প্রথিতযশা বাঙালি কবি মৃদুমন্দ সুরে নয়, রীতিমত যুক্তিতর্ক দিয়ে যখন বোঝান ‘মেয়েরা কবিতা লিখতে পারে না, তা শুধু নয়, তাদের কবিতা লেখা উচিত নয়’, স্তাবকদের কোনও অভাব পড়ে না মহা সমারোহে তাকে সমর্থনের জন্য। আমি আপনাকে বলব এখনও গ্লিসারিননির্ভর বাংলা সিরিয়ালের টিআরপি সর্বাধিক এবং পৃথিবীর নবতম অলীক ভাইরাসটির কারণে ভারতবর্ষে লকডাউনের সময়ে পঁচিশ বছর পর রিপিট টেলিকাস্টের ‘রামায়ণ’ ৯১ কোটি দর্শক গদগদ চিত্তে গেলেন। এখনও অসহায় নারীর অগ্নিপরীক্ষা টাইপ নাটক শ্রেষ্ঠ অরগ্যাসমিক টুল। অর্থাৎ যে শর্তগুলি আমি রাখলাম একজন নারীর পাঠযোগ্য হয়ে উঠতে তা অবান্তর কোনও চর্চা নয়। যে রূপে সমাজ একজন নারীকে দেখতে চায়, হুবহু সেই আর্কিটাইপ্যাল স্টিরিওটাইপের কাছে যোগ্যতামান উত্তীর্ণ করে তবেই একজন নারী সাহিত্যক্ষেত্রে পাঠযোগ্যতার প্রবেশপত্র অর্জন করেন। নাহলে তিনি প্রথম চারটে শব্দ। অস্বাভাবিক মনে হলে এখনও অবধি বাংলা ধ্রুপদী সাহিত্যিকদের মধ্যে যে কজন নারী সর্বাধিক পরিচিত তাদের দিকে তাকান। লীলা মজুমদার বা আশাপূর্ণা দেবীকে অতিরিক্ত পূর্ববর্তী মনে হলে সুচিত্রা ভট্টাচার্য আর তিলোত্তমা মজুমদারের কথা ভাবুন। আপনি অস্বীকার করলেও সদ্যপ্রয়াত নবনীতা দেবসেনের ব্যক্তিচর্চা নিয়ে কুৎসা তাঁর মৃত্যুর পরেও বিদ্যমান। ফিরতে হল তো চারটি শব্দের কাছেই?

বহির্মহলের শার্সিতে অনেক চিড় পড়ল। ঋতুপর্ণের ঋণ স্বীকার করে অন্তরমহলে পা রাখি এবার? এক্ষেত্রে প্রথমে প্রশ্ন আসে সাহিত্য ও জীবনের সম্পর্ক নিয়ে। আর সেই তর্ককে কিছুটা সহজপাচ্য  করতে আমরা আশ্রয় নিতে পারি পাশ্চাত্যের কিছু তত্ত্ব ও উদাহরণের। প্রসঙ্গের খাতিরে যদি মেনেও নিই একমাত্র পর্যাপ্ত অনুবাদের অনুপস্থিতিই বিশ্বসাহিত্যের দরবারে বাংলার খরামাত্রিক পরিস্থিতির কারণ তাহলে তা অতিসরলীকরণ হয়ে যায় না কি? কারণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ক্ষেত্রে আমরা বঞ্চনার দুঃখ যাদের জন্য অনুভব করি তাদের কেউই সাম্প্রতিক নন এবং নারীদের মধ্যে তা একমাত্র মহাশ্বেতা দেবীর। তিনিই রবীন্দ্রনাথের পর একমাত্র ভারতীয় যিনি নোবেলের জন্য শর্ট লিস্টেড হয়েছিলেন। এবং যে কোনও সাহিত্যসাধক মাত্রেই নিশ্চয় এই তথ্যকে অস্বীকার করবেন না যে তিনি তার জীবনচর্যা ও সাহিত্যসাধনার কোনও পৃথকীকরণ করেননি। এই দেশে ভার্জিনিয়া উলফ জন্মাননি। সিলভিয়া প্লাথ, এন সেক্সটন, ব্রন্টি সিস্টারদের কেউই না। এ তাদের সৌভাগ্য না বাংলা সাহিত্যের পোড়াকপাল এ কূটে না ঢুকেও বলা যায়, আত্মায় মননে যে বোধ নিয়ে জন্ম হয় কোনও ক্ষণজন্মার, যার তাড়নায় তাদের সমগ্র যাপন শুধুমাত্র উপলক্ষ হয়ে ওঠে সৃষ্টির, তার সারভাইভের কোনও স্পেস বাংলা সাহিত্য তার কোনও নারী স্রষ্টার জন্য বরাদ্দ রাখে না। সমিধের অভাবে যজ্ঞাগ্নি নির্বাপিত কখন যে করে দেয় ছকে বাঁধা নৈতিকতার শিলনোড়া জীবন, টের পাওয়া যায় না। পেলেও কিছু করার থাকে না। অবচেতনে ভয় কার না থাকে চারটি শব্দের? আপাতদৃষ্টিতে অবাস্তব মনে হলেও যদি এই যুক্তির আলোয় আপনি বাংলা সাহিত্যে নারীদের অংশকে তুলাদণ্ডে চাপান, গুণগত বা পরিমাণগত যে কোনও সূচককেই এড়িয়ে স্পষ্ট বলা যায় এখনও অবধি অতি সামান্য ব্যতিক্রম ব্যতীত কোনও নারী সাহিত্যের চরাচরে মৃগয়া তো দূর, দেহলিজেই বিচরণ করে উঠতে পারেননি। কীসের সম্মান আর কীসের বঞ্চনা? সাহিত্যচর্চাটাই যাদের করে উঠতে দেওয়া হয় না তাদের আর প্রাপ্তি প্রবঞ্চনা নিয়ে কথা…

***

 

ধারণা কোনও এক রৈখিক সত্য নয় এমনকি সত্যও কখনও একমাত্রিক নয়। সুতরাং পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদগুলিতে নারীদের সাহিত্যসৃষ্টির প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে যে চিত্র আলোচিত হল এবং প্রায় সিদ্ধান্তের মত করে একটা সূত্রে উপনীত হওয়া গেল, যে মনন ও যাপনগত আকাশ সাহিত্য নির্মাণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় দুটি শর্ত তার অনুপস্থিতিতে নারীরা তাদের মূল কাজের নির্মাণই করে উঠতে পারেননি, সেই অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র না সরে বাস্তবতায় যে পরিমাণ চর্চিত উপাদান উপস্থিত আছে তার নিরিখে বঞ্চনার ইতিবৃত্ত সন্ধানে এরপর এগোনো যেতেই পারে। একদম শিকড় স্তর থেকে শুরু করা যাক। বাঙালি মাত্রেই তার সাহিত্যচর্চা শুরু হয় কবিতা দিয়ে আর এটা প্রায় নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে অভ্রান্ত। পরবর্তীতে কর্পোরেট অফিসের ব্যস্ত অফিসার যার বাড়িতে একটিও ইন্টিরিয়রের প্রয়োজনে ব্যবহৃত ছাড়া বই নেই, তিনিও যে নবম-দশম শ্রেণিতে প্রথম কদমফুলকে বর্ষায় নিজের ভিতর ফুটতে দেখে দু-দশটা লাইন ছন্দ মিলিয়ে লিখে ফেলেননি একথা হলফ করে একেবারেই বলা যাবে না। অবশ্যই সেটি মোবাইল-ইন্টারনেট যুগের পূর্ববর্তী পৃথিবী ছিল। সামান্য অপ্রাসঙ্গিক হলেও একথা বলাই যায় সম্পূর্ণ পরিবর্তিত দুটি পর্যায়ের পৃথিবীকে এই জগৎ প্রত্যক্ষ করেছে অদ্যাবধি শেষ শতবর্ষে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী, অন্তর্জালের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী আর এখনও পরবর্তী পর্যায়ে না পৌঁছানোয় যে অতিমারির অবতারণা করা গেল না, সেটি। এবার বলুন তো, একদম বিশুদ্ধ হিসাবশাস্ত্রের কচকচি দিয়ে, কৈশোর-যৌবন সন্ধির ভার্চুয়াল প্লাটফর্মের আগের যুগে একমাত্র প্রকাশমাধ্যম স্কুল-ম্যাগাজিনগুলিতে কটি মেয়ের কবিতা ছাপা থাকত? এর মানে কি এই যে তাদের বর্ষা তাদের যমুনা তাদের কুঞ্জ তাদের প্রতীক্ষা জাতীয় অনুভূতিগুলোর অস্তিত্বই ছিল না? তা তো নয়। কিন্তু চশমা পরা মেয়ে মানেই রাগী অঙ্কের রসকষহীন দিদিমণি যেমন একটা মিথ তেমনই মেয়েমানুষ স্কুলে পড়তে গিয়ে কবিতা লিখছে একথা প্রকাশ্যে এলে যে বিদ্রূপের শিকার হতে হবে সেই আশঙ্কায় পঞ্চাশ শতাংশ আর প্রকাশ পরবর্তীতে একান্নবর্তী ব্যঙ্গের তাড়নায় বাকি পঁয়তাল্লিশের কাব্যসাধনার সেখানেই ইতি ঘটে যেত।  অবশিষ্ট পাঁচ শতাংশের মধ্যে যে গুটিকতক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি অতিক্রান্তে অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতার পদক্ষেপ অথবা আপাতস্বাচ্ছন্দ্য সমঝোতার গার্হস্থ্যজাল পেরিয়ে অন্তঃসলিলা ফল্গুর মত সাহিত্যসাধনাকে বহমান রাখতে পারত তাদের দিকে এবার আলোচনা এগোক। জীবন নামের আঙ্গিক একটি মেয়ের কাছ থেকে যা যা প্রত্যাশা করে, সাহিত্যে তার বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম ঘটে না। মেয়েদের সাহিত্য হবে শান্ত শীতলপাটি, ভিজে লাল গামছাটির মত, এটাই প্রার্থিত। শুধুমাত্র পাঠক সমীপে নয়, সমসাময়িক সাহিত্যকর্মীদের মননেও, এ বড় বিস্ময়ের। মডেল স্টাডি করেই হোক, অথবা কল্পনাপ্রসূত, একজন পুরুষ শিল্পী ন্যুড অঙ্কনে বা ভাস্কর্য নির্মাণে যেভাবে প্রভূত সম্মানের অধিকারী হন, সম মানের স্বীকৃতি তো আরব্য রজনী, কুৎসার অধিক কিছু প্রাপ্তি ঘটে কি যদি শিল্পীর লিঙ্গটি ভিন্ন হয়? প্রকৃত কলম পাঠকের দাসত্বনির্ভর নয়, একথা যেমন সত্য ঠিক তেমনই কলমের কারণে সামাজিক যাপনকে প্রশ্নের মুখে না দাঁড়িয়ে পড়তে হয়, এমন অবচেতন ক্রিয়া পদবিন্যাসে প্রভাব ফেলে না একথাও অলীক বলেই বোধ হয় যদি স্রষ্টাটি নারী হন। উচ্চকিত স্বরে সমর্থন না করলেও এই প্রবন্ধটি যারা পড়ছেন তাদের নিঃশব্দে শ্বাস ফেলে স্বীকার করতেই হবে এমন সাহিত্যিক একজনও এমন নেই মেয়েদের মধ্যে যাকে জীবনের কোনও না কোনও পর্যায়ে তার প্রেমিক হোক বা স্বামী, পিতা হোক বা পরিবারের বয়জ্যেষ্ঠ কোনও সদস্য, সন্তানসন্ততির চোখে আর কিছু ক্ষেত্রে চোখ পেরিয়ে মৌখিক আক্রমণের অন্তত শিকার হতে হয়নি তার কোনও না কোনও সৃষ্টির পটভূমি, বিষয়, চরিত্র অথবা ভাষা নির্মাণের প্রকৌশলজনিত প্রসঙ্গে। কজন পুরুষকে আজ অব্দি তার সৃষ্টিরহস্যের পোস্টমর্টেম করতে হয়েছে বলবেন আমায়? তার উপর হয়তো সাংসারিক উদাসীনতার অভিযোগ আসতে পারে। তার স্রষ্টাসুলভ খেয়ালি পদচারণের আলোচনা চলতে পারে, এই অবধিই সীমা। কিন্তু একটা মেয়েকে করতে হয়।

***

 

“ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি”— চটুল গানের পংক্তি শুধু নয়, নির্মাণ সাহিত্যের অতি বড় সত্য। শুধু ব্রহ্মার পরিবর্তে তার মানসকন্যাকে নিয়ে আসুন। আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধায় তার জন্য বরাদ্দ শুধুই বেদি, উৎসব, নৈবেদ্য বা অঞ্জলির ফ্যাশন প্যারেড। তিনি যদি সৃষ্টিতে স্বয়ং আসেন, তার শুভ্র বসন, তার বীণা, কিংবা নিরীহ বাহনটি সুদ্ধ তাকে ওই প্রথম চারটি মানবিক শব্দে বিদ্ধ হওয়ার জন্য বিশেষ অপেক্ষা করতে হবে না। সাহিত্য পাঠ করে নারীকে বঞ্চনা করবেন কী করে আর? একদম জেনেটিক প্র্যাকটিসেই তো সৃষ্টির পথ অবরুদ্ধ করে রেখেছে পৃথিবী তাদের। একদম অভ্রান্ত নৈপুণ্য। যে কজন এই কুটিল ছক ভেঙে লিখেই ফেলেছেন, আর এখন লিখছেন, পৃথিবীর কাঁটা যেদিকেই ঘুরুক, তাদের পড়ার আগেই তাদের শারীরিক গড়নের স্ক্যানিং আর যাপনের বিস্তৃত তথ্য নিয়ে কফি থেকে মদ কোনও পেয়ালাকেই তাপমাত্রা পরিবর্তনের নূন্যতম অবসর দেওয়া হয় না। সাহিত্যিক যেখানে একজন নারী, সেখানে সাহিত্যপাঠের আগে ও পরে সাহিত্যিককে অধিক পাঠের চর্চা যতদিন অব্যাহত থাকবে, নারী শুধু বঞ্চনা নয়, ওই চারটে শব্দেই ক্রুসিফায়েড হতে থাকবে নিরন্তর। মেল শভিনিসম, ইগো আর ডমিনেশন নারীর সাহিত্যকে ছাড়ের তালিকায় রেখে নিস্তার দেবে তার অবদমনের প্রশান্তি তল্লাশে, এ অলীকের বিলাস কল্প নিয়ে অন্তত উপমহাদেশের কোন নারী যেন সাহিত্যে না আসেন। বরং প্রস্তুত হয়ে আসুন, নিজেকে বার বার চারটে শব্দ চীৎকার করে শুনিয়ে শুনিয়ে, তাতে অন্তত সাহিত্যিক সত্তাটিকে পাঞ্চালী সহ্যে আগলে রাখতে পারবেন।

***

 

‘ট্র্যাফিকিং’ শব্দটি অতি পরিচিত পৃথিবীর আদিমতম জীবিকাটির সঙ্গে। ভাবলে বিস্মিত হতে হয় সাহিত্যে নারীর অবস্থানের সঙ্গে এর যোগ কী নিবিড়। কেন আমি শুরুর চারটি শব্দ দিয়ে এই বিষয়ের অবতারণায় এসেছিলাম, তা যতদূর সাধ্যে কুলিয়েছে, আলোচনার চেষ্টা করেছি। শেষও করব তাকেই ধ্রুবক ধরে। মালিকানাহীন হস্তান্তর হয় না অবিকল সাহিত্যে নারীর সৃষ্টি নিয়ে? ট্র্যাফিকিং শব্দটি কেন আনলাম? বয়স-বংশমর্যাদা-শিক্ষা-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কোনও কিছুরই ফিল্টার না মেনে যেভাবে প্রতিনিয়ত অপহৃত হয় শুধুমাত্র ‘বায়োলজিক্যালি মেয়ে’ এই পরিচয়ে লক্ষ লক্ষ নারী আর তাদের ক্রেতা-বিক্রেতার যাবতীয় ভিত্তিহীন ও অবান্তর অধিকারের শিকার হিসাবে হস্তান্তর হতে হতে পয়সার বিনিময়ে বিকিয়ে যেতে যেতে ব্ল্যাক হোলে ঠাঁই পায় তাদের পরিচয়পত্রগুলো, একই পরিণতি সাহিত্যেও ঘটে মেধা ও ব্যক্তিত্বের দাখলিয়তে। কোনও মেয়ের লিখতে আসা থেকে শুরু করে তার উত্থান ও প্রতিষ্ঠার প্রতিটি অংশের ভাগচাষি নয়, অভিভাবক হতে ব্যগ্র হয়ে ওঠে পুরুষ প্রভুরা। তাদের মনোরঞ্জনে ত্রুটি হলে বা নির্জন স্বকীয়তায় কেউ বিরাজ করতে চাইলে তাদের লেখনীও কি নিজস্ব, এই ঘৃণ্য সন্দেহ পুঁতে দেওয়া হয় রক্তবীজী কৌশলে।

কলমের জোরে অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে কারও পরিচিতির প্রসার ঘটলে অবলীলাক্রমে লেবেল সেঁটে দেওয়া হয় পাইকারি দরে ‘শুয়ে ছাপায়’। নৈতিক শুদ্ধিকরণের ঝান্ডা উড়িয়ে আত্মমর্যাদার শিরদাঁড়া ভেঙে দেওয়া হয় কত নারীর যারা লিখতে এসেছেন নিতান্তই আত্মার তাগিদে। পুরুষ যখন উচ্চারণ করে “একমাত্র কবিতার প্রতি আমি বিশ্বস্ত” তখন তা সমাদর পায়, সমতুল বক্তব্য নারী রাখলে সে হয়ে যায় ‘বেশ্যা’। সেলুকাস মনে পড়ে। স্রষ্টার নারী পুরুষ হয় না। কিন্তু অনভিপ্রেত, আকস্মিক, অবিরাম আক্রমণ লাগাতার নিয়ে যেতে হয় দ্বিতীয় লিঙ্গের স্রষ্টার সংবেদনশীল স্নায়ুর বিক্ষেপকে। কীসের যুদ্ধ? ভেরি বাজার আগেই তো সর্বজনবিদিত ফলাফল সদর্পে ঘোষিত। বঞ্চনা বহু পরের কথা। সাহিত্যে নারীকে তার নিজস্ব অবস্থানটুকুতে স্বীকৃতি দিলেই হয়তো চালচিত্র বদলাত। কিন্তু এ এমন এক ময়দান যাকে রুমিও খুঁজে পাননি। চামড়ার সঙ্গে ঘিলুকে ঘুলিয়ে পোড়া খিচুড়ি রেঁধে পরিবেশনের শিল্পকলা কী হতে পারে প্রতিটি নারী সাহিত্যিকের প্রতি পিতৃতন্ত্রের ব্যাখ্যা তার আদর্শ উদাহরণ। পুরুষ তার বন্ধুবান্ধব, সঙ্গিনী, মা, স্ত্রীকে নিয়ে বা ছাড়া উৎসব, পানভোজন ইত্যাদি প্রমোদের প্রদর্শন নির্বিবাদে করতে পারেন পাবলিক প্ল্যাটফর্মগুলিতে, প্রশ্ন ওঠে না তার সাহিত্য নিয়ে। সমান নয়, সামান্য ছবি আপলোড করুক তো লেখালিখির সঙ্গে জড়িত কোনও নারী তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে, ‘রূপ দেখিয়ে লিখতে এসেছ’, এই ধৃতরাষ্ট্র যুক্তিতে মুহূর্তে ম্লান করে দেওয়া হবে তার মেধার দর্পণগুলিকে। নারী মাত্রেই অপরাধী। তার কলম থেকে পোশাক, মগজ থেকে শরীর— যে কোনও বিচারে নামার আগে নাকে দুর্নীতির পারফিউম লাগিয়ে নিতে ভোলে না বরাহসমাজের নন্দনেরা। সেখানে নারীর সাহিত্য পাবে প্রাপ্য সম্মান? হায় সোনার পাথরবাটি।

একলব্যকে নিয়ে দুনিয়া তোলপাড় হয়। কত নারী যে সাহিত্যিক হতে এসে সামান্য স্বাধীন শ্বাসটুকু না নিতে পেরে নীরবে পেন তুলে রাখে অথবা নীল লাল হাজার তিমির পেটে সেঁধিয়ে গিয়ে হারিয়ে ফেলে নামটুকুও, সার্ভে করলে ডকুমেন্টারি হতে পারে। কজন প্রতিষ্ঠিত পুরুষ বোয়াল অনুবাদ করিয়ে নিয়ে স্বীকৃতি দেয় নবাগত নারী অনুবাদককে? নামটুকু অবধি নিতে তাদের জিভ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে থাকে আমরণকালীন। কেউ হয়তো সম ওয়েভের সমান ক্ষেত্রের জীবনসঙ্গী নির্বাচন করেন জীবনকে সাহিত্যেরই এক পাতা ভেবে। তাদের পরিণতি আরও করুণ। প্রথম লিঙ্গের ভারি নামটির ছায়ায় অধিকতর যোগ্য হয়েও আজীবন যাত্রার কাটা সৈনিকের ভূমিকায় অভিনয় করে চলার থেকে বেশি সম্মান কোনও মঞ্চই তাদের দেয় না। নাম তুললে ব্যক্তি আক্রমণের দায়ে দুষ্ট হতে হয়, মানহানির মামলা রুজু হওয়াও বিচিত্র নয়, অতএব সে কথা থাক। কেউ তো আবার মরে গিয়ে সিংহদুয়ার খুলে দিয়ে যান তার পুরুষটির সাহিত্য সাম্রাজ্যে খোলা ষাঁড়ের চামড়ায় ঢুকে পড়ার আয়োজনের। বিচিত্র এই সাহিত্য ক্ষেত্র। এখানে নারী? আর তার বঞ্চনা? কষ্টিপাথর থেকে কৃষ্ণবর্ণকে আলাদা করার কোন প্রক্রিয়া যদি থাকত, এই অধমও নিশ্চয়ই চেষ্টা করত কতভাবে আর কী কী প্রকারে সাহিত্যে নারীকে বঞ্চিত ও প্রতারিত করে রাখার কারনামা জারি আছে আদি থেকে সম্প্রতি। বরং শিরোধার্য করি চারটি বিশেষণ। একজন নারী হিসাবে এই সাহিত্য জগতে আমার প্রাপ্তি এই অমূল্য অর্জন।


 

 


সোনালী চক্রবর্তীর কবিতা "ইনফেরনো"

 

"ইনফের্‌নো
কখনো রসনীতির উল্কি গাঁথতে-গাঁথতে ভেবো তো...এমনও তো হ’তে পারে মেয়াদ ফুরিয়ে নির্বাসিত হয়েছেন ঈশ্বর। জন্মের পর জন্ম...রাষ্ট্র, রেল, রুটি, রক্ত এসব ইকেবানা সাজাতে-সাজাতে হেরে-যাওয়া দলটা শুধু ধরতে পারে না, ঠিক কতটা বেলজিবাব শিরায় ঢোকালে মধুরেণ ঠেকবে সাড়ে চারশো কোটি বলিরেখা আঁকা মহাগোলকের ইনফের্‌নো।"

সোনালী চক্রবর্তীর উক্তি

 ভালোবাসায় 'প্রাক্তন' অর্থে কোনো শব্দের অস্তিত্ব নেই, প্রেমে হয়তো আছে। প্রথমটি বোধের এক স্তরে উত্তরণ, পরেরটি সম্পর্কের দস্তাবেজ।


 

সোনালী চক্রবর্তীর কবিতা "শোকপ্রস্তাব"

 

"শোকপ্রস্তাব
তোলপাড় বারিশ এলে চূড়া থেকে কৃষ্ণ ঝ’রে পড়ে, আর কিছুটা ভারী হয়ে ঘনাতে থাকে রাধা।
এখন ভো-কাট্টা সুতো অথবা জানে বৃক্ষ সকল, ডোবা ছায়াদের চর থেকে আলোর তামাম ডানা, কোকিল যেমত একা।
দালির ছবির নিচে সাবলীল সরগমে আধপোড়া সে-কাছিমে গাঁথা রুপোর সুঁই। অশ্ব ও গজ নিখুঁত সাজালে তস্করেই পায় রাজসূয় আসন,
তুমি আজকেও জানলে না, জিগরবাঈ?
কী হবে এত ভেবে নাজিল-এ-কুরান!
ভাঙা নথের শোকপ্রস্তাব,
রবিশঙ্করও কি কখনো বাজান?"

সোনালী চক্রবর্তীর গদ্য

 ফ্যাট'কে অনুবাদ করলে যে 'স্নেহ' হয় সে উদাহরণে বাঙালীর শিরদাঁড়াই যথেষ্ট। এত কোমল... ঘটি বাটি ছাদ ভাষা মা বাপ, মায় ঐতিহ্য অস্তিত্ব বিশ্বাস কেড়ে কুড়ে নাকে বেধড়ক লাথি মারতে থাকলেও জিভ শুকতলা থেকে নড়ে না।

সোনালী চক্রবর্তীর গদ্য

 

রাম দেখেছ রুদ্র চেনোনি
ছোটবেলায় সিক্রেট পুলিশের ক্রিয়াকলাপ পড়তাম। লক আপে কম্বলে জড়িয়ে রডের বাড়ি মেরে সব হাড় গুঁড়ো করে দেওয়া হতো কিন্তু শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকত না। পোশাকের উপর দিয়ে নির্যাতনে যৌন নিগ্রহ হয়নি তাই তো? কিন্তু এই রায়ে প্রতিটা মেয়ের দেহ, আত্মা, বোধ, সম্ভ্রম, আত্মবিশ্বাসকে যে ধর্ষণ করে হত্যা করা হলো সেই বিচারটা কোন আদালতে হবে? আজ প্রজাতন্ত্র তাই না? এই রাষ্ট্র? প্রার্থনা করি আজ ট্র‌্যাক্টর র‌্যালি সব কটা ক্ষমতার ইমারত ও সংবিধানের অচলায়তনকে জমি বিবেচনা করে ভারতবর্ষকে দেশের মাটি ফিরিয়ে দিক।
প্রলয় নামুক আকাশ ভেঙে...
জয় হিন্দ

 

সোনালী চক্রবর্তীর গদ্য

 

কমল অথবা পলাশ অথবা সলিচ্যুড ইত্যাদি...
পাহাড়ি কনভেন্টের কুয়াশায় শ্রী পঞ্চমী বলে আলাদা কোনো রোদ্দুর ওঠে না। সেখানে অনেক সন্তের আলো বিষণ্ণ পাইনের বনে লুকিয়ে থাকে। একটা মেয়ে অর্কিড ঝুলনো পাকদণ্ডী বেয়ে একা হাঁটতে হাঁটতে কৈশোর পেরিয়ে যায়। রোজ একটা করে ঘন্টার দীর্ঘ ঢং এর সঙ্গে অনেক দূরে অজস্র মেরিগোল্ড আর কুন্দের একে অন্যের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলার অদ্ভুত ঝর্নার কোনদিন কোনো মিল থাকে না, সে জানে, খোঁজেনি। শাড়ি আর ধুতির রামধনুতে বছরে একটা করে দিনের সকাল এত হলুদ হয়ে যায় পৃথিবীর কোনো কোনো প্রান্তে, একা এস্রাজ বাজাতে বাজাতে, ঘুঙুর বাঁধতে বাঁধতে, বই এ ডুবে যেতে যেতে সে তাকিয়ে দেখার সময়ও পায়নি। কিন্তু সে অদ্ভুত মিল পেয়েছে ভাবতে বসে একটি বীণা যতটা একা ঠিক ততটাই তার দেবী। কত রহস্যের মেঘ তার শুভ্র উপস্থিতির অন্তরালে। কত আয়োজন অথচ কে পায় তাকে? বলা ভালো কে চায় তাকে? তাকে যে চায় তাকে নি:স্ব হতে হয় আগে। সৃষ্টির আদি শর্ত সমর্পণ। বড় উদাস তাই সে দেবী, বিরান। ভাবছিলাম আজ, বয়স ভাবায়, এখন বাড়িতে থাকি, সামনে বহুযুগ ধরে চলে আসা পুজোর পট খানি, মাটির দোয়াত, খাগের কলম, হয়তো তারাই ভাবাল। দেখলাম পিতলের পুষ্পপত্র উপচে পড়ছে ফুলে। কিন্তু শিকড় ছিঁড়ে গেলে যে কোনো কিছুই বড় মৃত মনে হয় আমার, ফুল তার ব্যতিক্রম নয়। দেখতে ইচ্ছে হয় পলাশকে, ছুঁয়ে, একবার... কত কিছুই তো আজও হলো না, সম্ভবত কোনো কিছুই না হওয়াকে 'এক কথায় প্রকাশ' করতে হলে 'জীবন' শব্দটা লাগে।

সোনালী চক্রবর্তীর কবিতা সম্পর্কে বিদিশা সরকার

 

ভৈরবীর দিনমান
--------------------
সোনালীকে আমি এইভাবেই পড়ি। সোনালীর সমগ্র। সোনালীর মার্গ দর্শন। যখন নিজেই নিজের কবিতা সম্পর্কে কবিতা বেশাতি এ কথাই বলেছিলাম। তখন মমিস্রোতে সেই বেহায়া নাম্নী যদি তার দগ্ধ দাগগুলো দশাশ্বমেধে রূদ্র রূপ নিয়ে জিভের মানুষটিকে উদ্দেশ্য করে কিছুটা উচ্চকিত হয়ে বলে "ভাদ্রমাসে দেখেছি পেখমরাত জুড়ে তুলো - তুলো সন্ত্রাসবাদ ...."
অথবা " ছায়াপথ পোড়া ছাই উড়ে এসে বৃষ্টি নামালে তোমাকেও কি বলা যায়,শঙ্খ পায় সখা,পাখি সুখ না ছড়ালে পরাগও বিষই লাগে"।একে কখনো আক্ষেপানুরাগ বলা যায় না।তিতীক্ষার সুপ্ত আস্ফালনও নয়। পাত্র থেকে উপচে পড়া অমৃতের অপচয় ও বিষোদগার ‌। জানি না ক'জন ভৈরবীর কান্না শুনেছেন বা শোনার প্রয়োজন বোধ করেছেন।বস্তুবাদীদের কাছে ভোগ্য সীমাবদ্ধ সময়ের পর উচ্ছিষ্ট ছাড়া কিছুই নয়। আমার পরের কবিতায় পৌঁছতে সময় লাগে।ভাবি কি ভাবে শুকিয়ে যায় চোখের জল। আবার নতুন আয়োজনের প্রস্তুতি পর্বে সেই অনিবার্য সত্যি কথাটা বলবে বলেই এই পূর্ব প্রস্তুতি। "অথচ বিষাদনামায় দাসখত লিখেও/ কেউ বুঝল না আজও ,/ কোন যাতনায় তার শরীরে রোহিণীর সওগাত রাইয়েরই নীলাম্বরী।"
আমি কবি সোনালী চক্রবর্তী'র "মমিস্রোতে বেহায়া সিন্থ"এর কথা বলছিলাম। আভোগি উত্তাপ বিষয়ক কিছু আশ্লেষ তারাণা'র অন্তে অর্গাজমের ঠিক আগের মূহূর্তে ছিঁড়ে যাওয়া বেহালার ছর ও পর্দার অন্তরালের অযাচিত অবারন বৃষ্টির শীর্ণ প্রগলভ ধারা যেন প্রোযেক্টরে ভেসে উঠছে আর আমারই পরণের শাড়িটা সেই ছায়াছবিতে ছুঁড়ে দিয়ে বলছি ' বসন পরো মা ......।
এই বই বিষয়ে এর বেশি একটা কথা আমি বলতে পারব না। বইয়ের একটা কবিতা দিয়ে শেষ করব।
পাখি, ঘুড়ি আর সুতো - সুতো মানুষ
-------------------
একটা মেয়ে ভালোবাসলে পাড়ে বসে আয়ু ফুরিয়ে দেয়।যার নাম কুবের সে ঘরের দায়ে রোজ জাল ফেলে। নিজেকে পাখি জেনে বেচবে বলে কোনো-কোনো পাগল বাজারে পৌঁছে দেখে হাজার হাজার মৃত চাঁদ আঁশটে জলে ঢুবে খাবি খায়।ঘুরিটা উড়তে উড়তে ভাবে, আহা,কী সরল মাটির গান,বঁটি দিয়ে কিছু জ্যোৎস্না কুচিয়ে দেওয়া গেলে তিনটে মানুষেরই অন্ধকার নেভানো যায়।
প্ল্যাটফর্ম প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত।
শুভেচ্ছা সহ
বিদিশা দি ❤️

জয়দী্র মৈত্র আলোচনা করেছেন সোনালী চক্রবর্তীর কাব্যগ্রন্হ "জামার নীচে অলীক মানুষ"

 

"জামার নিচে অলীক মানুষ প্রসঙ্গে"
দৃশ্য কখনো ছবি। ছবি কখনও ভেজা। যেভাবে জল কখনও শুকনো। ফলের যেটুকু নিচে বালি, কামড়ানোর ততটা ওপরেই মরিচীকা। মানুষের মতোই অলীক। মানুষ পথ হারাতে হারাতে অন্ধকার। খুঁজতে খুঁজতে আর পথ নেই। পথের আলো তার হাড়গোড় বিছিয়ে বিস্মৃত এক আক্রমণের মত ঘুমোয়। এটুকু প্রথম অনুভূতি।
টুকরো টুকরো দৃশ্যে কিছু কবিতা উঠে এসেছে। কিছু কবিতায় দর্শন আছে। প্রগাঢ় অনুভব আছে। এমনকি অতিকথন আছে। অতিকথন প্রথম কবিতার বইয়ের অলংকার। মাতৃতান্ত্রিকতার হাওয়ায় মা ও তন্ত্রবীজ উড়ে উড়ে ভেঙেছে কিছু লেখায়। আজকের আপনার লেখা যেখানে দাঁড়িয়ে, তার শিলান্যাস৷ কবিতার শিলান্যাস যদিও অনেকটা পালকের কারখানার মত।
অসংখ্য অসংখ্য অসংখ্য আবহ এসেছে। কবি রসদের চাঞ্চল্য পেরিয়ে কখনো রসের স্থিরতায় এসেছেন। কখনো উপমার শেষে এঁকেছেন উপমাহীন এক বিন্দু৷
অন্ধকার এবং বিষাদ এ বইয়ের পরতে পরতে। তবু প্রচ্ছদের যে মানুষটা পাথরের পরীকে চাঁদ দেখাচ্ছে, সে কি খুঁজছে কাউকে? অলীক নয়৷ অলৌকিক সে মানুষ। জামার নিচে নয়, জামার অনেক ভেতরে তার বর্ণময় ত্বকজগত।
*আপনি পরিচিত দৃশ্যকে পুরাণ বানাতে পেরেছেন*। এটা মোটা করে লিখলাম, কারণ এই বইটি নিয়ে এক কথায় বলতে গেলে এই কথাটাই উঠে আসছে বারবার৷
উদাহরণের ভিড়ে লেখার পরিধি বাড়ালাম না। আপনাকেই আপনার লেখার অংশ তুলে তুলে দেখাব কেনই বা?
লেখায় থাকুন। শুভেচ্ছা।"
✍🏻জয়দীপ মৈত্র

 

সোনালী চক্রবর্তীর গদ্য

ভাবা প্র্যাকটিস করলে হয়না?
আমরা ভীষণ জাজমেন্টাল আর এটাই হয়তো আমাদের ক্রাইসিস। একটু তলিয়ে ভাবুন যে কোনো কাউকে যে কোনো ছুতোয় অভিযোগের আগে। কেন জিনিয়াস প্লেয়াররা বিরাট সফল কোচ হয় না? কারণ দুটো গ্রহের কক্ষপথ আলাদা। একজন শিল্পী পৃথিবীর সাধারণ নিয়মের বাইরে নিজের পদচিন্হ আঁকতেই আসেন আর একজনের প্রশিক্ষকের ধর্মই হলো সুনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট কৌশলগুলিতে অভ্যস্ত করে তোলা। এতক্ষণ আপনারা আমায় পড়ছিলেন শান্তভাবেই হয়তো কিন্তু এখন যদি বলি এই কথা সাহিত্য জগতের ক্ষেত্রেও সত্য, অনেকেই দ্বিধাগ্রস্ত হবেন সমর্থনে। আচ্ছা বলুন তো, যে সত্যিই অলীক জগতে বিচরণকারী লেখক, সে কখনো কোনো গোষ্ঠীপ্রধান হতে পারে? চাণক্য আর চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য, দুই এরই বিচরণক্ষেত্র রাজনীতি অথচ অবস্থান ও ভূমিকা? সরলীকরণের ব্যাধিতে সূক্ষ্মতা ক্রমশই হারাচ্ছে। ভাবুন প্লিজ, একটু ভাবুন।

সোনালী চক্রবর্তীর প্রতিবাদ

 কে জানি কয়েছিলেন টিভি বিতর্কে, মেয়েদের হাফ প্যান্ট পরা ভারতীয় সংস্কৃতি নয়। আজ একটি মেয়ে অলিম্পিকে রৌপ্য পদক পেয়েছে, সেটাকে সেলিব্রেট করতে আরেকজন দুই পেগ বেশী খাবে। দুজনেই রোজ শর্টস পরে, দুজনেই ভারতীয়। আর এই দুজন কোটি কোটি সাধারণ ও অসাধারণ মেয়ের প্রতিনিধি মাত্র। চোখ দিয়ে দ্যাখ, মানতে শেখ, তোর মনুবাদী সংস্কৃতি নিপাত গেছে

 1 জন এবং ইন্ডোর-এর একটি ছবি হতে পারে

সমীর রায়চৌধুরী সম্পর্কে সোনালী মিত্র


 

Monday, August 30, 2021

সোনালী চক্রবর্তী


 

সোনালী চক্রবর্তীর কবিতা "চিত্রনাট্য"

 চিত্রনাট্য

ঘন নীল জমি....অভিমান অভিমান....
কুন্দ হাসির ফুলকারি....শুভ্র....মুক্তো জমাট
প্রতি সম্পর্কই তো জামদানি বোনে পূর্বরাগে ,
বিসমিল্লা সানাই তুলে রাখলে সব মণিকর্ণিকা ।

এখন মোরা সাইয়া বহুশ্রুত দাবিতে উপাস্য উইন্ডোয় ফরোয়ার্ড ,
গ্লেনের কান্নায় অমীমাংসিত পূর্ব সূত্ররা সরল সমীকরণে উজ্জ্বল ,
' ও রোয়ে হামাসে লিপট কর কিসি অওর কে লিয়ে
অওর হাম উনহে মানা ভি না কর পায়ে '

সফল নাটকের চিত্রনাট্য প্রয়োজন
অগত্যা ভনিতা রেখে আত্মকথন ।

সোনালী চক্রবর্তীর কবিতা "অথ জীবন"

 পোষা কাছিমটির পিঠ জুড়ে রঙিন ঘুড়িদের আঁকলে দিন ভোর, আদর করে সুতো দের পাখি নামে ডাকতে ডাকতে ফুরিয়ে দিলে রাত অথচ আচারি সুবাস ছড়ানো ঘুম ঠাসা আদিম বয়ামের ভিতর কোন ফানুসও তোমায় ভাসিয়ে তুললো না।

এই সনাতনী ব্যর্থতায় বাকি ভাণ্ড টুকু সামান্যও বিচলিত নয় টের পেলে যখন কাচ আর রক্তের তামাশায় আহাজারি কিছু কুড়োবে ভাবছিলে।

বৃক্ষের আয়ু ফুরনো পাতাটি শুধু জানলো নুনের পুতুলেরা কেন ফেরে না কখনো সমুদ্র মাপতে গেলে।

সোনালী চক্রবর্তীর কবিতা "জাতচুম্বক"

 কাঠবিড়ালি, কবুতর ইত্যাদি নরম ও নিরীহ সোহাগের দ্বিপদী মাত্রেই দাবিদার, মেনে নেব ভালোবেসেছ যদি কালসর্প কোলে ঘুমায় তোমার, বিলি কেটে দিয়ে যায় ব্যাঘ্রের জাত।

ভাবছ কেন বলছি এসব ? বড় গভীর এক দহতে লুকোচুরি। ঘাট থেকে ঘাট, সাম্পানখানি ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়, ভেড়ে না, ধারণের মাটি অতো সহজ নয়। স্নায়ুতে যন্ত্রণা এলে কারণ খুঁজতে নেই, ঘুমপাড়ানি ছড়ায় যে বর্গীরা আসে শৈশবে, প্রজাতন্ত্রের উল্লাসে তাদেরই নিখুঁত রূপ ম-কার চারিতায়। রঙের নাম রাত্রি হলে বহু অশ্বের ছিন্ন মাথা তাড়া করে ফেরে, হোঁচট খেলে অপত্য মুখ সম্বিত ফেরায়। কোনো বৃক্ষে সে আশ্রয় নেই যা ঝড়ের ডানায় এক পাখি এঁকে রাখে, না কোনো সুরায় এতো তারল্য যা 'মিসিং' নেভাতে পারে। এত প্রবল করে রেখেছ ব্যথার পরাগধানি, ভীষণ রকম বুঝতে পারি প্রদক্ষিণই বিধি। মেরু থেকে ঝরতে থাকা বিকর্ষণের লিপি, এই জনমে তোমায় অতিক্রম? বকেয়া দিল্লাগি।

সোনালী চক্রবর্তীর দুটি কবিতা "জন্মদিন" এবং "চড়া"

 

জন্মদিন

কার শঙ্খের নাম ছিলো কী, বিপন্ন সূর্যের ধারাপাতে থাকবে না কোনোদিন, ভেসে যাবে বিষাদ কৌমুদকী, সায়র ধোয়া আলোর তরবারি দূর থেকে শুষে নেবে দ্রোহ, নিভে যাবে অভিমান, হয়ত জড়িয়ে নেবে উদাসীন নামাবলী, ফসিলে জমানো থাক কাছিমটির অপেক্ষা, অবসরে পদাবলী ছিঁড়ে এই সর্পযোনিতে আমি মেঘে মেঘে প্রণয় অসম্ভব কাব্যই লিখি।



চড়া 

গর্ভাশয় খুঁড়ছো প্লাস্টিকের সেতু ভেবে? আঁশ জ্ঞানে নির্লিপ্তিতে ছিঁড়ে চলেছ একের পর এক রুখসতের ধমনী? দুটো দ্বীপ কখনো জানে না মাঝের জলটুকুই তাদের একমাত্র সংযুক্তি। তোমায় দেখে বুঝি নিতাই শুধু একলা নয়, কী সহজে ভুলে যায় যে কোনো পুরুষ ঈর্ষার আদিমতম শত্রু নিরাসক্তি। ভারবাহী গাধাকে তুমি পাখি নাম দিতে পারো, মানুষের যে কোন ভাষা অরণ্যের আঙিনায় প্রলাপ বই তো কিছু নয়। নতুন কোনো নদীর জন্ম যে গুহামুখ দেয় না তার শৈবাল কোন অশ্বের চারনভূমি হয়? ভেজা পাতা থেকে হরফ লুঠ হয়ে গেছে, ছেঁড়াখোড়া প্রচ্ছদে এত যুদ্ধের বীজ গেঁথো না যেন কাছিম তার আড়া বিস্মৃত হয়, ব্যক্তিগত স্মরণিকায় লেখা থাক, কাঠ নামে ডাকার আগে বৃক্ষকে মৃত হতে হয়।

সোনালী চক্রবর্তীর কবিতা "নাগ"

 

সেই অদ্ভুত পুকুরটা খুঁজে চলেছি যার নীচে শ্যাওলারা মোম ফেরি করে ফেরে, ডানা ভাঙা মৎস্যকন্যা কিছুর ঝুপড়ি থাকলেও থাকতে পারে, যদিও রক্তকে প্রবাল জ্ঞানে উপড়ে নিয়ে গেছে শৌখিন চন্দ্রের পুতুল ও মধুর কারবারি । এই কথায় মনে পড়ে গেল, করতল চিরে এনে দেওয়া শোণিতকে আলতা ভেবে এঁকেছিলাম, স্ব-কামি বাদুড় হতে না পেরে ঠোঁট রাখোনি, গীত না ছুঁতে পারলো গোবিন্দ, না পেলো অঘোর বিষাদ । তুমি এখনও বলবে মিরাকল সর্বদাই ধ্বণাত্মক কোন ঘটনা?  জাদু লন্ঠনের আলো ভেঙে দিয়ে সেরিন নামালে শিরায় আর সেই আশ্চর্য অন্ধকার মোহে উন্মাদ হতে থাকলাম যেখানে পাখনায় প্রদীপ গেঁথে দংশন সাজাবে পিরানহা লীলাবতী। পাতাল হেরে যায় এমন অতলে তলিয়ে গিয়ে জানবো শুধু গরলের ভাঁড়ারে টান ছিলো বলে কুলোপানা চক্করে আশ মিটিয়ে নিয়েছে মধুকর সর্পটি। 

সোনালী চক্রবর্তীর কবিতা "জতুবসন্ত"

অকথিত আলেখ্যরা ব্যক্তিগত ইথারে ডুবজল পাচ্ছে না,
অথচ ভেদ রহস্যের থেকেও মুগ্ধ ছায়া ফেলছে গবেষকের ধী,
এই সব মুদ্রা এক লিপিকে ইঙ্গিত করছে...
ভীষণ ভেসে উঠছে কারণ সমুদয়,
কেন চন্দ্র সামান্য এক দেবতা হলেও
কীট পতঙ্গের মত জনজাতি তাকে নারী হিসাবেই চেয়ে যায়।
বসন্তের পালক থেকে পোকা খাওয়া রোদ্দুর পিছলে যাচ্ছে ক্রমশ,
আর মেহজবীন উদাস হতে হতে আমি পৌঁছে যেতে চাইছি তোমার জন্মমুহুর্তে,
যেখানে আমার কোন স্মৃতি ছিলো না।

 

সোনালী চক্রবর্তীর দুটি কবিতা "বাঁশি" ও "ফ্রড"

 

বাঁশি 

একটা রেশমের পোকা আয়না খুঁজে চলেছে...

মানে বই খোলার আগে শোনো, কাঠবিড়ালি কখনো বাদাম হতে চায়না, স্বপ্ন আর সাধ এক শব্দ নয়, ভুল যা হওয়ার বানানে হোক, উদ্দেশ্যের ফরেনসিক না জানলে ক্ষতি কিছু নেই। এখনো এই নগরী এই চরাচর প্রেত হতে চেয়ে কুয়াশায় মাথা গোঁজে, তুমি দেখো বা এড়িয়ে যাও, প্রতি রন্ধ্র থেকে ব্যথা কঁকিয়ে  উঠে রাগিণী মায়াবিস্তার করে। 

আয়নার টুকরোগুলোতে একটা মাকড়সা আদরের মত বুনে দিচ্ছে জাল...

তীর্থের কাক হলে ঘুরে আসা যেতো হস্তিনাপুর, পরিবর্তে এক অন্ধ কুকুরের মত সেই প্রভুর অপেক্ষায় বসে আছি যাকে কখনো দেখা হয়নি, যেহেতু জানি,
এমন নসিব নয় কেউ লিরিকে ব্যাখ্যা দেবে,
আজ রাধা বৃজ ছোড় চলি... 




ফ্রড 


পলাশের রক্ত মাখলে,
ব্যাধির বসন্ত দেখলে না।

তর্জনীতে মুক্তো ভাসালে,
ঝিনুকের গর্ভ চিনলে না।

নির্জনে শিকার ধরলে,
সর্বজনীন ফাঁদ বুঝলে না।

নেশাকে মাদক ডাকলে,
শিরায় সুফি জাগলো না।

পালক খেললে ময়ূর তুমি,
কৃষ্ণ জানলে না।


সোনালী চক্রবর্তীর দুটি কবিতা

 

যৌতুক

প্রতিটা মেয়ের ছায়াতেই একটা করে ভাঙা বাতিঘর দেখতে দেখতে পুরো নাভিজন্মটা পেরিয়ে চলেছি অথচ কেউ আমায় উদ্ভিদ সনাক্ত করে উপড়ে দেওয়ার প্রয়োজন বুঝছে না। সিঁদুরে মেঘ কখন সহজিয়া পথ খুঁজে নিয়ে দেউলিয়া হতে চাইছে সামান্য জলের অজুহাতে, পারদের উপর কোনো আলো সেই প্রতিবিম্বের ঠিকানা চাইছে না। অর্জন ভাবতে বসলে মনে হয় কেন যে ডানা পুড়িয়ে পুড়িয়ে সামান্য কিছু হীরে খোঁজা হলো, এতো জানাই ছিলো আমার শ্যাওলার সেতার, যত নিপুণ ছড় ততই গর্ভস্থ মাটিতে বেহুদা জেগে থাকা কবরে ফুটে উঠবে প্রলাপ-এ-পারিজাত।

সারভাইভ্যল ইন দ্যা সেকেন্ড

বিষণ্ণ সিঁথিদের ঘিরে অসুস্থ জ্যোৎস্নার পরিক্রমা বিলাস দেখতে দেখতে ক্লান্ত হচ্ছি আমি। সময়কে নদী বলেই তো ডাকে মানুষেরা, ইদানীং তার জলেদের কাছে প্রতিটা সূর্য আলোর নামে একমুঠো করে বালি বয়ে আনে, চর দীর্ঘায়ুকামী। যদিও আক্ষেপের মানে ভাঙা বাঁশিতে ছিদ্র গোনা তবু মনে হয়, এত যে ভুলে যাই জনমভোর, প্রায় সব একদা প্রিয় কিছু, কেন শ্বাস নেওয়া মনে রেখে রেখে আয়ুকে ক্লান্তির অবসর দিয়ে যেতে হলো?

সোনালী চক্রবর্তীর দুটি কবিতা

 

বসন্ত কেবিন 

খাঁজে খাঁজে বিষাদ জমে যে প্রস্তরের নাম প্রাচীন দাঁড়ালো তা কোন খাদজ মধু বিহার হলো না, উচ্ছ্বাস পূর্ণিমা দর্শনের ভাব দৃষ্টিতে নিহিত থেকে গেলো, চন্দ্রভূমিকায় ছায়া সৈনিক। তোমায় বলা হলো না সব কেবিনের বসন্ত পরিযায়ী হয় না, যেমন প্রতিটি জনাকীর্ণ রাজপথে হাঁটা আদতেই এক- একটি অন্তহীন শ্মশান যাত্রা। মুদারায় হংসধ্বনি নিয়ে আমি বৃষ্টির শালিক দেখছিলাম, শীত আর জলের বাস্তবতায় যার হাহাকার ধুয়ে যায়নি, অভিশাপ হয়ে গেঁথে গেছে আত্মায় আর নি:সঙ্গতার আধুনিক লাইটহাউসদের পরে নিতে দেখা গেছে ফ্লাইওভারের পোশাক। ধুঁয়া আছে, যেমন থেকে যায় মৃত প্রেমের ক্ষত, শুধু জাতিস্মর হতে না পারার আক্ষেপে ভস্ম করলাম স্মৃতি, দহনজন্মের উত্তরাধিকার এই আদিম চিন্হ।



অভিসম্পাত 

ব্যথা গভীর হলে নাড়ির কথা মনে পড়ে। মানুষ দাবী করে জন্মের যন্ত্রণা শুধু তার, প্রমাণে বিছিয়ে দেয় নদীর জরায়ু চিরে কঠিন কংক্রিট জাল। মানুষ এমনও ভাবে মৃত্যুর অধিকার একা তার আর জমা হতে থাকে ফরেস্ট শ্মশানে তৃতীয় পাণ্ডবের লাশতবুও মৃত নক্ষত্রের অভিসারী আলোরা অবিচল সারল্যে খেলে অনামী গ্রাম্য পালকের ডানায়। আক্ষেপ কী জানো? প্রতিশোধের কোন মৌলগুণ নেই। ডিপ্রেশনের ওষুধ সংক্ষিপ্ত করে না দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর তালিকার আত্মহনন। তবু মানুষ জন্ম-মৃত্যুর মালিকানা নিয়ে ছিঁড়েই চলে আদিভূমির যাবতীয় নাভিচিণ্হ, ধূসর করে চলে নমন। আজও সে জানলো না অরণ্যের বিষাদ জমলে ক্ষেত্রফল মাপে দুর্ভেদ্য কুয়াশার চারণ, দীর্ঘশ্বাসের গর্ভ থেকে কখনো মোছা যায় না অভিশাপের ক্ষরণ।


সোনালী চক্রবর্তীর পাঁচটি কবিতা

 


গর্ভজল

তুমি যখন গর্ভে ছিলে,সুরাহীন প্রহর তোমার মায়ের কাছে ছিল আরব্য রজনী।তোমার শোণিতের গতি তার স্পন্দন বৃদ্ধির আগের ত্রিংশটি দিন,রং না আলো কে বেশী ভালো,এই চর্চায় কেটেছিল বেশ।পরাক্রমী তোমাকে সন্তান রূপে পেতে জনক বা পালক কোন দ্বিতীয় পুরুষের ঔরসের দায় ছিল না।সম্ভবতঃ সেই অহং তোমার মাকে ঈশ্বরী করে তুলেছিল ক্রমে।তোমায় ধারণ ছিলো সাধন সমতুল।সেই ধারণায় অশ্টদশ পক্ষ,পর্বত ও কন্দর,অরণ্য ও নদী,ভূমি ও আকাশ,অজিন হয়েছিল তার।চন্দ্রকলার মতো মাতৃশরীর আর আত্মা ছেয়ে ক্রমে প্রকাশিত হচ্ছিলো তোমারই জন্ম লক্ষণাবলী।ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজ ও সংস্কারহীন তোমার মায়ের সুফিয়ানায় কোন বন্ধন গ্রন্থি পড়েনি কোনদিন,না এলো চুলে না রক্ষা কবজে।বিরান বাতাসের নজর পড়েছিল কি?অথবা ছুঁয়েছিল কোন রুদালি শ্বাস?নাহলে তুমি জন্ম নিলে দিগ্বিজয়ী,আর গোধূলির প্রমাদ নয়,মুকুটের প্রমোদ ছিন্ন করলো নাড়ি বিজাতীয় শস্ত্রাঘাত?এপিটাফ লেখার ক্ষণে সূর্য ওঠে এখন তার।বিস্মৃতির অতলে ডুবেছে কাব্য ইচ্ছেগুলি।রন্ধ্রে রন্ধ্রে বৃশ্চিক দংশনে জিহাদের নামাবলি।কোন মেঘ আসবে নিভাতে চিতা বন্হিমান?যদি মানো পঞ্চ উপাদান মিলনে সৃষ্টি এই দীন দুনিয়ার ,একথাও অভ্রান্ত জেনো, জল,প্রস্তর ও বনানী সাক্ষ্য দেবে জন্ম পূর্বের সঙ্গমের তোমার ও মাতার।



একটি অস্তের কাহিনী 

কর্মসূত্রে আসা যাওয়ার পথে 'বেইমান-দেউড়ি' পড়ে। আকাশকে ব্যথা শোনানোর রাত পেরিয়ে প্রতি সকালে দেখি ক্ষয়িষ্ণু রক্ত রঙের ইঁটের খাঁজে খাঁজে অজস্র মলিন বিশ্বাসঘাতকতা। পাঁজরে তীব্র দংশন ধবল কোন লক্ষী বাহনের রূপে আসেনা।একাহারী শরীরের চোষক,সফল এক বাদুড় আত্মা থেকে উড়ে গিয়ে মিলিয়ে যায় বিপুল আলোর উৎসবে।সিসে রঙের হাওয়ায় কান পাতলে প্রতিধ্বনি আসে শেষ স্বাধীনতায় কোন যুদ্ধ হয়নি।পরিকল্পিত ছিলো প্রতারণা। প্রিয় বান্ধবীর কবিতায় 'ভালো' দস্তখত পড়ে সাম্রাজ্যবাদী দক্ষতায়।সিরাজদের কোন ঈশ্বর থাকেনা। ক্ষমতার খেলা চলে ব্যভিচারি আলেয়ায়।নেশাগ্রস্তের বমনে উঠে আসে সবুজ সন্দেহ,ঘৃণিত কৌশলের অপাচ্য মাধুকরি।কে দাঁড় বেয়ে আনবে বর্ষা?মায়েরা জানেনা কীভাবে একই গর্ভ থেকে প্রসব হয় সন্ত ও হত্যাকারী।


কালরাত্রি 


আমি কখনো সামগান হতে পারিনি,যার উচ্চারণে সামান্য কোন প্রাণ অলৌকিক হয়ে যায়,যাকে চিরন্তন অজপা করে নিয়তি নির্ধারিত পুরুষ,যাকে কোনোদিন না প্রত্যক্ষের শ্বাস চেপে আগুন বা মাটিতে শেষ শান্তি খোঁজে নিতান্ত জৈব সুখ।এখন বন্ধ্যাত্ব অতিক্রান্ত জড়তাকাল।সমাজে কোন সক্রিয় খাতা নেই,আন্তর্জালিক কোন বেদিতেই মুখের প্রতিচ্ছবি নেই।পঞ্চষট চিতা যে বিভূতি উপহার দিয়েছে তার তুল্য সন্ন্যাসবোধ নেই।তৃতীয় দাশরথী তার আসন ছেড়ে দিয়েছেন পরম করুণায়।হে মায়াময়,বড় জানতে ইচ্ছে হয় কি ছিল অপরাধ।তোমার অমলিন সিংহাসন,উৎসবে  জনসমাগম। বহুদিন দুয়ারে ছিলাম চাতক প্রত্যাশায়।রবাহুতো ধ্বনি বিক্ষেপে নির্ঝরিনী নয়,শীতল লাভা প্রস্তরিভূত হলো ধার্মিক দক্ষতায়।যারা কোনোদিন এসেছিল কুঞ্জ বিলাসে,নিজ নিজ সম্মানের পার্বণী বুঝে নিয়ে কালের কলে সুরক্ষিত শিবিরে।তাদের কোরাস ও কমন সর্বনাম আজ প্রকট হলো 'শুভানুধ্যায়ী'। তাহলে শীত ও বসন্তের পলাশহীন জলে একাকী ডুবে যে অতিক্রান্ত করলো এক পূর্ণ গর্ভ ধারণ কাল,সেই-ই অপরাধী?কড়ি ও শৃঙ্গারহীন প্রেমজ বেসাতি,প্রবজ্যা সেরে ফেরার পথে অলীকের দাবি।যোগীনি কায়ায় অদ্ভুত ঘোর রবি পুত্রের নীলাম্বরি। 
অভিশাপ,তুমি কেন ভীত এত? ব্রহ্মাস্ত্র প্রত্যাহার বিদ্যা যার অধিগত, মেনে নাও,তুমিই সেই চন্দ্রঘন্টা,কাব্য কালরাত্রি।




  সাংবাদিক 

শোনো,আমি অহল্যা নই.....
আমি প্রশ্ন রাখি স্বয়ং অবতারের নির্লজ্জতায়,
তর্জনী নির্দেশ করি তার কৃমিকীট সদৃশ লালসায়,
তুমি তো দ্বিপদী প্রাণী মাত্র,
কবির আসন ছেড়ে এসেছো জমি জর্জর জাগতিকতায়.....
মহুয়া কৌমার্য কীটদষ্ট এখন,
সুরা প্রাত্যহিকী সহজ করেছে সম্ভোগ ক্ষমতা,
ভুলিয়েছে ভাষাজ্ঞান,ব্রাহ্মণীশান্ত মন্ত্রদীক্ষা......
উপেক্ষায় মাড়িয়ে যাচ্ছ প্রতীক্ষা সমূহ,
শূণ্যতার অবসর নেই আর প্রমত্ত প্রমোদসঙ্গী ভিড়ে....

অথচ প্রিয় পুত্র ছিলে অযোধ্যার,
কৃষ্ণ অঙ্গারে রাঙা ধুলোর সোহাগই ছিলো শৃঙ্গার....


চূর্ণ আয়নার স্থান চিরদিন বিস্মৃতি কুঠুরী,
হাহাকারের বিলাসিতা আসবেনা আর,
নিশ্চল চেয়ে দেখবো বুর্জ এ খলিফার মতো
তোমার উত্থিত ধ্বজ বেনিয়া সম্প্রদায়ে,
স্বর্ণ আর আলোর নামে কুম্ভস্থিত মীন নয়,
মুদ্রারাক্ষসে গচ্ছিত হবে তোমার অধিকারে,
তোমার পুরুষকারের সৌজন্য,
বনলক্ষী নির্বাসিত হলো পান্ডববর্জিত অলীকে....


কাব্যবন্ধ্যা এ সময়ে জানি,
এই লেখারও ভবিতব্য ঠোঙা,
তবু,শুধতে তো হবেই অতীতের পারানি,
(মনে পড়ে?)
নাড়া বেঁধে শিখিয়েছিলে সৎ সাংবাদিকতা......




মৃত সংলাপ 


পূর্ণ কলস হাতে এক মাতৃসন্ধ্যা অপেক্ষায় ছিলো কোজাগরীর,
তার নিবিড় আদিম সংসারটিতে ।
জুইঁধোয়া রেকাবির পাশে আসন খানির রঙ খানিক স্বস্তিক ।
পাথুরে সে চরাচরে সেদিন প্লাবন এসেছিল ।
সুখ উপচে উঠলে কখন যে উনোন নিভে যায়,
ঝিঁক খোঁজ রাখে?
পদ্মপাতার নাও ভাসাতে ভাসাতে
ধানের ঝাঁপিটিও ধুয়ে গেলো ক্রমে ।
এরপর বহু বর্ষের খরা দর্শন ।
প্রতিটি অবান্তর সকালের অন্ধকার
ম্লান থেকে ম্লানতর করলো মায়া সংলাপ ।
নক্ষত্রের শেষ আলো পৌঁছনোর সময় প্রাচীন প্রস্তর যুগের নাম মেট গালা ।
আর পুত্রের দেশে মেঘেদের বেপথু ফেরার আগে,
ছেঁড়া-খোঁড়া চালচিত্রের পাল সম্বল করে,
লক্ষীর শব ভেসে গেলো কলার মান্দাসে ।