Sunday, October 31, 2021
ইলুশিও
ইলুশিও
তুমি
দেখো অকালমৃত্যু, আমি জানি বিচ্ছেদের আতঙ্ক কতদূর তীব্র হলে প্রেমিকের
করতলে হত্যারেখা জাগ্রত হয়- আমাদের এক
অদ্ভুত সংস্কার, যে কোনো শব্দের বহুমুখীনতাকে আমরা জেদে অস্বীকার করি অথবা যে উপেক্ষার প্রয়োজন ছিলো বন্দিত্ব আরোপের প্রক্রিয়ায়, তা বরাদ্দ হয় ঝাঁকের কৈ হতে গিয়ে, লালন ভাসেন লালনের জলে, আবাদহীন জমি পড়ে থাকে রামপ্রসাদী খরায়। কমলিনী নিজের সঙ্গেই কথা বলছেন বহুক্ষণ ধরে (এই ইথারে কাউকে স্মরণ না করা অব্দি সে এসে অনধিকার চর্চা করে না) । যদি শরীরে প্রাণের অভাবের পরিভাষা 'মৃত্যু' হয় তবে হৃদে নয় কেন? কালরেখা প্রতিটি আয়ুতে ভিন্ন হলে অকালের সংজ্ঞা কী? যদি আত্মরক্ষার্থে হত্যা আইনসিদ্ধ হতে পারে তাহলে আজও ইউথেনেশিয়া অস্বীকৃত কেন? এত প্রশ্নের ক্ষত যে উদ্ধারণ পালার বিবেক পলাতক। আজ দেখতে যাবেন স্বধাকে, এই স্ফুরণে এখন লেডি ম্যাকবেথও যদি তার সঙ্গে কফিতে আসে, খুব ক্ষতি? কার ক্ষতি?
অদ্ভুত সংস্কার, যে কোনো শব্দের বহুমুখীনতাকে আমরা জেদে অস্বীকার করি অথবা যে উপেক্ষার প্রয়োজন ছিলো বন্দিত্ব আরোপের প্রক্রিয়ায়, তা বরাদ্দ হয় ঝাঁকের কৈ হতে গিয়ে, লালন ভাসেন লালনের জলে, আবাদহীন জমি পড়ে থাকে রামপ্রসাদী খরায়। কমলিনী নিজের সঙ্গেই কথা বলছেন বহুক্ষণ ধরে (এই ইথারে কাউকে স্মরণ না করা অব্দি সে এসে অনধিকার চর্চা করে না) । যদি শরীরে প্রাণের অভাবের পরিভাষা 'মৃত্যু' হয় তবে হৃদে নয় কেন? কালরেখা প্রতিটি আয়ুতে ভিন্ন হলে অকালের সংজ্ঞা কী? যদি আত্মরক্ষার্থে হত্যা আইনসিদ্ধ হতে পারে তাহলে আজও ইউথেনেশিয়া অস্বীকৃত কেন? এত প্রশ্নের ক্ষত যে উদ্ধারণ পালার বিবেক পলাতক। আজ দেখতে যাবেন স্বধাকে, এই স্ফুরণে এখন লেডি ম্যাকবেথও যদি তার সঙ্গে কফিতে আসে, খুব ক্ষতি? কার ক্ষতি?
"মরলে ভাই? বেশ... এ রাসের ঘোর ভাঙাবো না আজ, ভাঙবেও না"
কমলিনীর
তো সুখের কথা হবেই, স্বধার গ্রীবায় অভ্রান্ত স্কারলেট, চলনে গর্ভিণী
কাছিম। তাকে সমাজ যারপরনাই ভৎর্সনা তো করতোই নাগালে পেলে এই মুহূর্তে
রাবাবের যে তারে তার আঙ্গুল ছুঁয়ে আছে পাপ সাব্যস্তে, কিন্তু তিনি তো
কমলিনী, একশো আট তার সংস্কারে। তার মানসী আজ এমন আশ্লেষে যা পেতে প্রতিটি
অবতার শরীরে, ঔরস-যোনির চক্রে, কোটি কোটি জন্ম ধরে মাথা ঠোকে শ্রী ভগবান।
নাড়িতে
যে নৌকা ছিঁড়ে ভঙ্গুর পদ্ম কিছু রসস্থ থেকে গেলো, ঘাতক রাজহাঁস সে ঘুণ
বিস্মৃত হলো না- তত্ত্বগত অভিজ্ঞান আর প্রকৃত উপলব্ধিতে যে ফারাক তাকে
আসমান জমিন বলে নিতান্তই লঘু করে ফেলা হয়, আসলেই তারা দুই মেরুর। প্রতিলিপি
বা ছবি কল্পনায় অরোরা বেরিয়ালিস ভাবাতে পারে কিন্তু তা বিশ্বরূপের বিদ্যুত
সঞ্চালনে ব্যর্থ। অদ্ভুত ঘোরের ভিতর ঘাড় গুঁজে ভাবছিলো স্বধা। তাকে শীতল
রক্তের সরীসৃপ বলে ব্যঙ্গ শুনতে হয় বিস্তর, একেবারেই তাপ সহ্য করতে পারে না
বলে অথচ গত কয়েক ঘন্টা সে প্রায় ফার্নেসের ভিতর ছিলো বলা যায়।
অব্যবহার্য-পরিত্যক্ত জিনিস বোঝাই একটা ঘর যাকে গুদাম বললে বিন্দুমাত্র
নামকরণ বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা থাকবে না। স্বেদবিন্দুর স্রোত ছাড়া চন্দন
পালঙ্কের থেকে ব্যবধান বোঝেনি তো অথচ এই প্রলয়, প্রবল প্রার্থিত হলেও তার
প্রস্তুতি ছিলো না কোনো, পরবর্তী ধারণাও, ঠিক এইখান থেকেই তার
বিস্ময়যাত্রা।
কোথাও
একবারের জন্যেও স্বধার দ্বন্দ্ব আসেনি এতোদিন শৈবলিনী-কমলিনীর
আধ্যাত্মিকতা আর ট্যাঙ্গো সালসার উন্মাদ আবেগের মধ্যে। দুইই ছান্দ্যোগ্য,
দুইই এক সত্যের কথা বলে, শকট ভিন্ন, পথ এক। প্রথমটি
মূলাধার-স্বাধিষ্ঠান-নাভি-হৃদ- বিশুদ্ধ-আজ্ঞা-সহস্রারকে জাগ্রত করে
সূক্ষ্মতায় বিলীনে বিশ্বাসী। দ্বিতীয়টি নির্মেদ আধারকে ভেঙেচুরে মিলন ও
মুক্তি বিন্যাসে শরীরকেই অতিক্রম করে চলে। কোথায় বিরোধ? বাউলাঙ্গে রজ-রক্তও
তো সেই দিকই নির্দেশ করে। সবই 'ইত্থুসে ব্রহ্ম'। এই মতবাদ স্বধার স্নায়ুতে
বিশ্বস্ত আশ্রয়ে ছিলো ফলত সে শরীরকে কোনোদিন অস্বীকারের চেষ্টামাত্র
করেনি, অবদমন এক আত্মঘাত মাত্র জেনে অপেক্ষা করেছে। অথচ তবুও আজ মনে হলো সে
কিছুই জানতো না এতদিন, একে চন্দ্র থেকে চন্দ্রবিন্দু, কিছুই নয়।
শ্বেতপাথরকে
জড়িয়ে থাকো আগুনের সাপ, দেখো নাভি থেকে কিছু ব্যথা ফ্লেমিংগো হয়ে উড়ে
যাচ্ছে শেষ সন্তের খোঁজে- নিশ্ছিদ্র যন্ত্রণা স্বধার সর্বশরীরে। সেই
অনুভূতিকে ছাপিয়ে যাচ্ছে যে পশমে মাথা রেখে সে ঘুমিয়ে পড়েছিলো কয়েক
মুহূর্তের জন্য ইন্টারলিউড শ্রান্তিতে, এই ক্ষণে তার অনুপস্থিতি। দংশন...
এতো নিষ্ঠুর হয়? বজ্রের শক্তিতে বেঁধে রাখা উর্দ্ধবাহুদ্বয়ের ভিতর মাথা
থাকলে, শ্বাসরোধী চিৎকারটিও কি নিস্তেল প্রাপ্তির? তার অতলে প্রোথিত
হচ্ছিলো যার নৃশংস স্তম্ভ, উপসংহারী তন্দ্রায় তাকেই অসহায় পেয়ে এতো আদরের
আলপনা কীভাবে আঁকলো সে? শরীরে এভাবে মায়ামেঘ ঘনায়? এইই কি সেই বিশালাক্ষীর
থান শৈবলিনী যাকে নির্দেশ করতেন পঞ্চভূতের ফাঁদ নামে? কাঁদছে স্বধা
আপাতত... শৈবলিনী দেখছেন কুয়াশার আলোয়... ভাঙছে, নামছে, অঘোর বর্ষা...
যখন
শারীরিকভাবে পুরুষ নারীকে চায় অথবা নারী পুরুষকে, সেই আকর্ষণে বহু
স্তরবিন্যাস থাকে, শ্রেণীভেদও, কোনোটিই বিচারাধীন নয় কারণ যে কোনো শরীর
আসলেই এক আশ্চর্য আলাদিন। জাদু কি প্রদীপে থাকে? সম্ভব? প্রতিটি মানুষের
ভিতর বসত করে যে দুর্দম শক্তি সেই তো রূপকে চিরাগ। যে বোঝে সে খোঁজে, যে
বিশ্বাস করেনা, পায় না, এতো জলবৎ অঙ্ক মাত্র। শরীর নিয়ে এতো শুচিবায়ুগ্রস্ত
যারা, একবারও যে কেন তারা ভাবেনা- "যদৃচ্ছা লাভ"। তেষ্টাকে প্যারামিটার
ধরলে আরও সহজ হয় ধারণের আদল। জলের সন্ধানে কেউ পুকুরে অভ্যস্ত, কেউ খোঁজে
নদী, যার তৃষ্ণা মেটেনা সে ডোবে, তলিয়ে যেতে যেতে এল ডোরাডো। আর বাকি অংশের
কিছুই লাগেনা, বন্ধ বোতল থেকে প্রয়োজন মিটিয়ে নেওয়া, সুতরাং বিচার খাটে
না, খাটতে পারে না। অযথা উৎকর্ষ অপকর্ষ ন্যায় অন্যায় নিয়ম নীতির খাপ।
কিন্তু
আজ একথা স্বধা নিশ্চিতভাবেই বলবে যেহেতু শরীরের দূরত্ব শেষ হওয়ার ঠিক পর
থেকে টান বিদ্ধংসী হতে শুরু করলো সুতরাং গন্তব্য "দ্যা থার্ড শিপ"। যুক্তি
সাজাচ্ছিলো সে সাদা কালো চৌষট্টি খোপে। এখানে ভিজে যাওয়া তালুতে চুমু রাখতে
তোলপাড় এসেছে, তুরপুন নখে তৈরী হওয়া আঁচড়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে সাধ গেছে,
বরাবরের সম্বোধন 'তুই' অতর্কিতে বার কয়েক 'তুমি' হয়ে গেছে। মানুষের ভিতরের
মানুষটা বীজতলার পরেই যেন পাতাল ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে। ছিন্নভিন্ন করে চলে
যাওয়ার পর বার্তা এসেছে "বুকে আয়, এবার ঘুমো, ঘুমিয়ে পড়, মাথায় হাত দিয়ে
রেখেছি"। বারবার প্রশ্নেরা এসেছে "শরীর ঠিক আছে? ঠিক করে কথা বল, শরীর কি
ঠিক আছে?" সে উত্তর দেয়নি কারণ এই উৎকণ্ঠায় শরীর যতটুকু থাকে তার থেকে অযুত
মাত্রায় বেশী থাকে শরীরের অপ্রাসঙ্গিকতা।
এখন
মণিমালা'কাল। বারিধারা শঙ্খ শরীরের হাঁসুলি বাঁক ছুঁলে অনুপ্রবেশ বোধ
হচ্ছে। স্পর্শের স্মৃতি- যারে হেরিলে এ দেহলতা তাবিজ বোধ হয় যেমত। হাওয়ায়
বৃন্দাবনী সারং উড়িয়ে হেঁটে যাচ্ছেন সেই অনন্ত লম্পট। অজস্র ময়ূরের পালক
উড়ে বেড়াচ্ছে দিগন্ত বিস্তারে। স্বধার মনে করতে ইচ্ছে করলো তার নাম যিনি
লিখেছিলেন "নারী নরকের দ্বার"। তিনি কি কৃষ্ণভক্ত ছিলেন? জানা নেই তার।
তিনি সম্ভবত ময়ূরও দেখেননি। স্বধা হেসে উঠল। পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম
রাজনীতিবিদটি প্রতারকই তো ছিলেন। ফেরেননি গোকুলে না? কেনই বা ফিরবেন? অথচ
নশ্বর শেষ মুহূর্ত তক স্বর্ণমুকুটে শিখিপাখা যে কেন গুঁজে রাখলেন? স্টাইল
স্টেটমেন্ট? যেভাবে ক্রাইস্টের ট্যাটুর ভিতর দিয়ে ইদানীং নিপুণ শৈল্পীতে
আঁকা থাকে বিলাভেডের নাম, আপাত অদৃশ্য। "বুঝে লহো মন যে জানো সন্ধান"।
শ্রীমতির যোনিচিহ্ন আজীবন
মস্তকে ধারণ করে মহাভারত সৃষ্টি আর দ্বাপর ধ্বংসের লীলা করে গেলেন
যাদবকুলপতি অথচ কেউ টেরটিও পেলো না। স্বধাকে যে নীল নীল দহনে আজ ছেড়ে গেলো
সে তবে কে? কেদার মনে পড়ছে তার। ব্রহ্মরন্ধ্র থেকে উত্থিত ব্যপনে
কস্তুরীঘ্রাণ। শুভ্র পাথরে আছাড় খেয়ে ভেঙেচুরে যাচ্ছে অজস্র পিতলের
ঘন্টাধ্বনি। কৃষ্ণসর্পটি কাকে আঁকড়ে আজ প্রস্তরীভূত হলো?
আঞ্জুমান-২
আঞ্জুমান ২
"সাংকাশ্য নগরীর এখন কী নাম আর্নেস্তো?"
-- "প্রবারণার তো এখনো অনেক দেরী তথাগত, আজ হঠাৎ ?"
"
'বহুজন হিতায় বহুজন সুখায়' যদি শ্রমণদের কোনো একদিন বলে এসে থাকি
'চরত্থ্বে ভিক্ষবে চারিকং', নিজে আজ তার ব্যতিক্রম হবো? নিজেই না বললে
খানিক আগে আদর্শকে হত্যা করেছে আমার আর তোমার শরীরকে? তোমায় প্রত্যক্ষ করতে
হবে না তোমার আদর্শের পরিণতি? অন্ততঃ আমি মহাপরিনির্বাণ নিয়েছিলাম
ব্যক্তিগত নির্ধারণে আর তা প্রথম বৌদ্ধ সঙ্গীতির আগেই। কিন্তু আর্নেস্তো,
তুমি তো আজও সমাজতন্ত্র নিয়ে কিছু ভ্রমে। সব পেরিয়ে তোমায় আমি কবিই তো
দেখি। আর কোন উন্মাদ বিপ্লব আনতে এমন প্রেমিক হতে পারে? চাই না আঁশটুকুও
থাকুক, তাই আজই। তাকাও... স্বধাকে দেখতে পাচ্ছ?"
--
" পাচ্ছি। ভূতগ্রস্তের মতো ভাঙা ঘুম হাতে করে বসে আছে। প্রথমটা কিছু
বোঝেনি। ধীরে আতঙ্ক তার ডানার মধ্যে মুড়ে নিচ্ছে, সংজ্ঞা মুচড়ে উঠছে "
মহকুমা
মফস্বলটি যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে এবং পশ্চিমবঙ্গ যেহেতু ভারতরাষ্ট্রে, সুতরাং
কিছুমাত্র বিস্ময়ের নয় তার সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী অক্সিজেন প্ল্যান্টটির
দূরত্ব চুরাশি পূর্ণ আট কিলোমিটার। একটি মাত্র জাতীয় সড়ক (এন এইচ চৌত্রিশ,
বর্তমানে বারো) যা দিয়ে দুটি অঞ্চল যুক্ত, সেটিই উত্তরবঙ্গে পৌঁছানোরও
একমাত্র স্থলমাধ্যম প্রায়শই অতি বর্ষায় যার অন্তর্গত কিছু ব্রীজ ভেসে ও
ভেঙে যায় এবং জলস্রোতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বাকি ভূ-খণ্ড থেকে। বর্ষা ব্যতীত
তাকে ব্যবহার করতে বাধ্য হওয়া প্রতিদিনের কোটি খানেক যান কল্পনা করে মেঠো
পথের গোরুর গাড়ি তাদের তুলনায় কতটা সৌভাগ্য পোষণ করে আর অবশ্যই প্রার্থনায়
থাকে কবে পুরোপুরি এই স্থলজ অসভ্যতা থেকে নদীমাতৃক সভ্যতায় ফিরে যাওয়া যেতে
পারে। এ নরক থেকে ত্রাণ দেবে এমন পুত্রাণের আশা "দেহি দেবী" মন্ত্রেও
উচ্চারণ করা পাপ, এমত স্বধারও বিশ্বাস। ট্র্যাফিক আইন যারা রক্ষণাবেক্ষন
করেন তারা জানাতে ত্রুটি রাখেন না ইমার্জেন্সি সার্ভিসগুলির জন্য সড়কে
সর্বদাই অগ্রাধিকার থাকবে যেমন এম্বুলেন্স, বেবিফুড, লাইফ সেভিং ড্রাগস
ইত্যাদি কিন্তু এই আইনের নির্দেশিকায় যে 'সড়ক' শব্দটির অস্তিত্ব আছে "ইতি
গজ"র মতো করে যা সমগ্র আইনটিকেই প্রহসনে পরিণত করেছে তা জানার বা জানানোর
কোনো দায় তাদের থাকে না। এ রাজ্যে তুখোড় আন্তর্জাতিকতায় ক্ষমতার পায়ের নিচে
লাল কার্পেট পাতা, দামী মৃতদেহের সদগতিতে হাজির গ্রিন করিডোর, দফতরের
দেওয়ালদের পরানো থাকে নীল জার্সি... আর যাদের মুখে রক্ত উঠিয়ে রোজগারের অংশ
থেকে কেটে নেওয়া ট্যাক্সে এই লাল সবুজ নীল আতসবাজি তাদের জন্য 'পূর্ত
দফতর' নিতান্তই ডাইনোসর বা ডোডো পাখি। মাত্র দেড়শ কিলোমিটার দূরের
মহানগরীতে পৌঁছতে বা ফিরতে দিনের সিংহভাগ সময়কাল কাটিয়ে দেওয়া স্বধার কাছে
জন্মইস্তক এই অভিজ্ঞতা নিত্যকর্ম পদ্ধতির মতোই সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু
কিছুক্ষণ আগের ফোন তাকে যে খবর দিলো তাতে সে ফুটন্ত তেল আর জ্যান্ত আগুনের
মধ্যের পার্থক্য স্পষ্ট বুঝতে পারল। রিফিলড অক্সিজেন সিলিন্ডারের যে
ট্রাকটি প্রতিদিন সন্ধ্যায় সদরে ঢোকে, ডিফারেন্সিয়াল ভেঙে যাওয়ায় আজ কতক্ষণ
পর আসবে সংবাদ নেই। নার্সিংহোমের মজুদ থেকে নীলাদ্রি আর মাত্র ঘন্টা দুয়েক
সরবরাহ পাবেন তার ক্যনুলায়, বাকিটা ঈশ্বর।
" কিন্তু তথাগত, আপনি এই পরিস্থিতি দেখিয়ে আমায় কী বোঝাতে চাইছেন? আমার আদর্শ এখানে আঘাত পাচ্ছে কোথায়? "
--
" বড় অধৈর্য হয়ে পড়ো তুমি আর্নেস্তো, বালক স্বভাব। যা দেখাতে চাইছি তা
আমায় প্রশ্ন করে জানতে হবে না। প্রসববেদনা উঠলে কি ধাইমাকে জাগিয়ে তুলতে হয়
আসন্নপ্রসবাকে? "
প্রতিটি
ভাষার নিজস্ব ব্যাকরণ আছে যেমন প্রতিটি ক্রীড়ার নিজস্ব অনুশাসন, প্রতিটি
সমাজের নিজস্ব বিধান আর প্রতিটি সম্পর্কের নিজস্ব ব্যবধান। সোশ্যাল মিডিয়া
কোনো ব্যতিক্রম কি? যারা এটিকে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান বলে স্বীকার করে নেয়
তারা মানবে এরও নিজস্ব ব্যাকরণ, অনুশাসন, বিধান, ব্যবধান সবই বর্তমান।
নিজস্ব গণ্ডিতে ব্যক্তিগত প্রাপ্তি অপ্রাপ্তিকে তাহলে কেন প্রকাশ করা যাবে
না নির্দ্বিধায়? অন্ততঃ স্বধা এমনই জানত। সে যেমন নীলাদ্রির নার্সিংহোমে
এডমিটের খবর জানিয়েছিলো ঠিক তেমনভাবেই তার সঙ্কটও। একটি সিলিন্ডারের অভাবে
যে তার বাবা তার চোখের সামনে ডাঙায় তোলা মাছ হয়ে যাবে এই সাদা ও সরল সত্যকে
সে ভিক্ষার আবেদনে পোস্ট করেছিলো স্নায়ু সামান্য নিয়ন্ত্রণে আসতেই।
স্বধার
প্রত্যাশা ব্যর্থ হয়নি। তার অতি সংক্ষিপ্ত বৃত্তও প্রায় হাজার দুয়েক
শেয়ারে তার আবেদন পৌঁছে দিয়েছিলো সেলেব, সাহিত্যিক প্রশাসক মহলে।
প্রত্যেকেই পূর্ণোদ্যমে তাকে সাহায্যের চেষ্টা করেছিলেন। ফল এসেছিলো
মন্ত্রবৎ। আধ ঘন্টার মধ্যে সায়রের ফোন তাকে জানিয়েছিলো প্রশাসন সহ বিভিন্ন
মহল থেকে ইডেনের কেবিন ওয়ানকে নিয়ে এত উৎকণ্ঠার কৈফিয়ত তাকে দিতে হচ্ছে যে
সে সমস্যায় পড়ছে। সায়রের মালিকানার অন্য নার্সিংহোমগুলিতে ক্যারিয়ার পাঠিয়ে
সিলিন্ডার আনানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বধাকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে
ভবিষ্যতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সে কোনো সাহায্য চাইবে না, এর বিনিময়ে সায়র
ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ থাকলেন নীলাদ্রিকে পরিষেবা সংক্রান্ত কোনো অভাবে না
পড়তে দেওয়ার। অতি সহজ চুক্তি। একপক্ষে নীলাদ্রির আয়ু, বিপরীতে ইডেনের
নিরাপত্তা। যে পরিমাণ আলোড়ন এই মুহূর্তে স্বধার পোস্টকে ঘিরে শুরু হয়েছে,
কেন নার্সিংহোমের অধীনে থাকা সত্ত্বেও পেশেন্ট পার্টির ফরেন হেল্প লাগবে এই
ইস্যু তুলে, তাতে ইডেন ঘোরতর বিপদে। চরম স্বার্থপর স্বধা, নীলাদ্রির মুখ
স্মরণ করে চোখ বুজে কথা দিয়েছিলো- ভবিষ্যতে ইডেনে তার চোখে যাইই পড়ুক, যাইই
ঘটুক যে কারোর সঙ্গে, একমাত্র নীলাদ্রির প্রসঙ্গ ব্যতীত সে প্রত্যেককে এবং
সবাইকেই অগ্রাহ্য করবে- "মাস্টারমশাই, আপনি কিছু দেখেন নি"। কতো যে ডিল
হয় প্রতিটি পলে এই সংসারে, কতো শতরঞ্জ... তবুও দ্যূতক্রীড়ার প্রসঙ্গ উঠলেই
গান্ধার যুবরাজকে স্মরণ করে ইতিহাস... এ বড়ো দুর্ভাগ্যের।
"আর্নেস্তো,
যেটুকু দেখলে তা এক রোপণ উপাখ্যান মাত্র। সব বীজের নিয়তিতে মহিরুহ থাকে
না, কিছু বিষজ হাহাকারও ধারণ করে। পোখরান মনে পড়ে? আমি হাসছিলাম তাই না?
ভারতরাষ্ট্র তার কূটনৈতিক তুরুপে পৃথিবীর ষষ্ঠতম শক্তিশালী হিসাবে নিজেকে
প্রমাণ করলো, তার দায় কার - স্মাইলিং বুদ্ধ - আমারই না? আজও দেখবে। তাকিয়ে
থাকো..."
--"
তাকিয়েই তো আছি তথাগত কিন্তু এখানে কী করে আমার ভ্রম ভাঙার কাঠামো গড়া হবে
সে চালচিত্র এখনো অব্দি পেলাম না। আমি অনুমান করছিলাম আপনি মৌলবাদ কীভাবে
মহামারী হয়ে উঠছে এই অতিমারি পীড়িত উপমহাদেশেও সেই নিয়ে কিছু বলবেন। আচ্ছা
খেয়াল করেছেন, জাত নির্বিশেষে মৌলবাদীদের নিজেদের মধ্যে কী প্রগাঢ় মিল?
অন্ধত্ব ভিন্ন এদের দ্বিতীয় ধর্ম থাকে না, পৈশাচিকতা ভিন্ন দ্বিতীয়
ধর্মাচরণও নয় অথচ এদের চামড়ার নাম 'ধার্মিক'। কী পরিহাস না? আমি এও ধারণা
করছিলাম তথাগত আপনি মার্কস নিয়ে হয়তো বলবেন। "রিলিজিয়ন ইজ দ্যা ওপিয়াম অব
দ্যা পিপল"- এই বিকৃত, খণ্ডিত কোটেশনের মূল ও পূর্ণাঙ্গ বাক্যটি তুলে হয়তো
স্বচ্ছ করে দেবেন কেন মৃত্যুমুহূর্ত অবধি মার্কসের গলায় ক্রুশের চেনটি ছিল।
এও বলবেন পশ্চিমবঙ্গের রক্তাভ জারজেরা জনগণকে এতটাই অশিক্ষিত ভেবেছিলেন যে
তারা ধরেই নিয়েছিলেন কেউ মার্কস পড়ে না, বোঝে না, জানে না। ফলে হাতের
যাবতীয় মাদুলি ও তাবিজদের যত্ন করে সাদা পাঞ্জাবির হাতায় ঢেকে, তিন দশকেরও
বেশি সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক আচরণ অনুষ্ঠানকে অবজ্ঞা করে তখ্ত অধিকারে
রেখেছিলেন "
--"যা
তুমি নিজেই বোঝো তা যদি নতুন করে তোমাকে দেখাতে যাই তবে যে 'বোধি' শব্দের
অর্থ 'নির্বোধ' হয়ে যায় আর্নেস্তো। নীরবতা পৃথিবীর ভয়ংকরতম শীতল
মারণাস্ত্রের নাম। কিছুক্ষণ না হয় তারই অনুশীলন করলাম আমরা? এসো... বেশী
নয়, বুদ্ধের আত্মার নাম পরিমিতি... নিপ্পন আলো হয়ে ওঠা অবধি, এসো"
"Religion
is the sigh of the oppressed creature, the heart of a heartless world,
and the soul of soulless conditions. It is the opium of the people."
Subscribe to:
Posts (Atom)
-
"জামার নিচে অলীক মানুষ প্রসঙ্গে" দৃশ্য কখনো ছবি। ছবি কখনও ভেজা। যেভাবে জল কখনও শুকনো। ফলের যেটুকু নিচে বালি, কামড়ানোর ততটা ওপরেই...
-
কমল অথবা পলাশ অথবা সলিচ্যুড ইত্যাদি... পাহাড়ি কনভেন্টের কুয়াশায় শ্রী পঞ্চমী বলে আলাদা কোনো রোদ্দুর ওঠে না। সেখানে অনেক সন্তের আলো বিষণ্ণ প...